তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তরুণ প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের জন্য দেওয়া সম্মাননা কানেকটিং স্টার্টআপ বাংলাদেশ-২০১৬ এর শীর্ষ দশের একজন নূসরাত জাহান। তার উদ্ভাবিত সফটওয়্যার শারীরিক প্রতিবন্ধীদের সঠিকভাবে ব্যায়াম করতে সহায়তা করবে। বর্তমানে নূসরাত তার উদ্ভাবিত প্রযুক্তির একটি কাঠামো তৈরি করেছেন।
নিজের উদ্ভাবন সম্পর্কে নূসরাত বলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধকতার জন্য যারা থেরাপি নেন ও ব্যায়াম করেন, তার উদ্ভাবিত প্রযুক্তির মাধ্যমে হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার ব্যবহার করে তারা সঠিক ও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ব্যায়াম করতে পারবেন। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি এমন কিছু একটা করার চিন্তা ভাবনা করেন। ওই বছরের জুলাই মাসে তার এই ভাবনার জন্য তাকে শীর্ষদশে নির্বাচিত করা হয়। অক্টোবরে কাজ শুরু করে বর্তমানে তিনি এর একটি নমুনা তৈরির কাজ সমাপ্ত করেছেন।
তথ্যপ্রযুক্তির এই উদ্ভাবনকে পুরোপুরি উপভোগ করলেও নূসরাত জানান শুরুতে তিনি এই বিষয় পড়াশুনা করেননি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মার্কেটিং-এ বিবিএ করে তিনি জার্মানিতে ইকোনমিকস অ্যান্ড ফাইন্যান্সে মাস্টার্স করতে যান। কিন্তু সেখানে গিয়ে ইউজিবেলিটিতে ইঞ্জিনিয়ারিং-এ মাস্টার্স করেন। তিনি তখন মনে করেন, এই বিষয়ে পড়াশুনা করে কিছু করার সম্ভাবনা অপার। আর শুরু থেকেই তার ইচ্ছা ছিল আইটি সেক্টরে কিছু করার।
নূসরাত বলেন, সমাজের একটা ধারণাই থাকে মেয়েরা তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে দুর্বল হয়। এই সামাজিক ধারণা মেয়েদের মধ্যেও বাসা বাঁধে। ফলে তারা এই সেক্টরে কাজ করতে আগ্রহী হয় না। যারা এই ধারণা থেকে বেরিয়ে কাজ করতে শুরু করেন তারা ভালো করেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, এখন অনেক মেয়েই আইটি সেক্টরকে পেশা হিসেবে নিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে পরিবারের সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
দুই বোনের মধ্যে ছোট নূসরাত। তার মা একজন স্কুল শিক্ষক। প্রয়াত বাবা ছিলেন ব্যবসায়ী। সব সময় নূসরাত পরিবারের সহযোগিতা পেয়েছেন উল্লেখ করে বলেন, আমি ইকোনোমিকস ছেড়ে আইটিতে পড়তে এসেছি, আমার পরিবার আমাকে মানা করেনি।
নূসরাত জাহান প্রতিষ্ঠা করেছেন ইন্টারেক্টটিভ আর্টিফ্যাক্ট। এই প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে প্রথম কিলোফ্লাইট নামে একটি অগমেন্টেড রিয়্যালিটি গেইম ডেভেলপ করেছে। এই প্রতিষ্ঠানের সিইও-এর দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি বিডিজবস- এর একজন ট্রেনার হিসেবে কাজ করছেন। তার প্রতিষ্ঠান গেইম ডেভেলপম্যান্ট, অগমেন্টেড রিয়্যালিটি, ভারচুয়াল রিয়েলিটি নিয়ে কাজ করছে।
কিভাবে মানুষের প্রতিবন্ধকতা দূর করার কাজে অনুপ্রাণিত হলেন প্রশ্ন করলে নূসরাত জানান, জন্মকালীন জটিলতার জন্য তার ডানহাত জন্ম থেকেই অকেজো ছিল। যখন তাকে থেরাপির সাথে বিভিন্ন প্রকার ব্যায়াম করতে দেয়া হত, সেসময় তার সঠিকভাবে ব্যায়াম করতে অসুবিধা হত। তখন তার মনে হত এ বিষয় কিছু করা দরকার। তখন তিনি এই বিষয়েই কাজ করতে আগ্রহী হন। ভবিষ্যত্ পরিকল্পনা সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, তার প্রতিষ্ঠান একটি জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়ে মানুষের জন্য কাজ করবে। আর তার অর্জনের একটি অংশ তিনি গ্রামের মায়েদের প্রসবকালীন জটিলতার কারণে শিশুদের যে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয় তা দূর করার লক্ষ্যে ব্যয় করবেন বলে জানান।