বাংলাদেশিদের যেভাবে হোম কোয়ারেন্টাইন করছে!

বাংলাদেশীদের নিজ নিজ বাসায় হোম কোয়ারেন্টাইন বি লাইক-
.
মনির ইতালি থেকে দেশে ফিরে চৌদ্দদিনের জন্য নিজ বাসায় হোম কোয়ারেন্টাইনে আছে। এই খবর পাওয়ার পরই দূর দূরান্ত থেকে দুনিয়ার আত্মীয়স্বজন ওকে দেখতে আসা শুরু করেছে আপেল, মাল্টা আর হরলিক্স নিয়ে। রাজশাহী থেকে বড় চাচা এসেছেন চাচী আর চাচাতো ভাইদেরকে নিয়ে। মেজ ফুপা এসেছেন বগুড়া থেকে। সিলেট থেকে এসেছেন খালা খালু। এসে বললেন, ‘শুনলাম তুমি নাকি চৌদ্দদিন ঘরের ভেতরে থাকবা তাই তোমার খালা বললো পোলাডারে দেইখা আসি৷ সে তোমার জন্য রান্না করে নিয়ে আসছে। তোমার প্রিয় ইলিশ মাছ আর গরুর গোস্তের সালুন।’

তারপর সবাই মিলে একসাথে বসে খাওয়াদাওয়া করলো।
.
বন্ধুরা আসলো কিছুক্ষণ পর সিগারেট আর তাসের প্যাকেট নিয়ে। একসাথে বসে তাস খেলার জন্য। আম্মু মুড়ি মাখিয়ে দিয়ে গেলেন সবাইকে খাওয়ার জন্য।
.
সন্ধ্যাবেলা মনির বললো, ‘মা সারাদিন বাসায় বসে থেকে বোর হচ্ছি। আমি একটু সামনে থেকে হেটে আসি।’
মনিরের মা বললো, ‘আচ্ছা বাবা, বেশি দূর যাস না কিন্তু। ডাক্তার নিষেধ করে গেছে। অল্প একটু ঘুরেই বাসায় চলে আসিস।’
.
মনির বেশিদূর গেলোনা। শুধু মোড়ের চায়ের দোকান থেকে চা আর সিগারেট খেলো। এলাকার এক মুরুব্বী গম্ভীর গলায় জিজ্ঞেস করলো, ‘তুমিই তো হোম কি বলে তাতে আছো। বাইরে যাওয়া নিষেধ?’
– হ, চাচা। হোম কোয়ারেন্টাইন।
– হ্যা হ্যা, ঐটাই। তো বাজারে যাইতে পারবা না৷ কিছু দরকার হলে বইলো এনে দিব।
– আচ্ছা চাচা।
– আর পারলে একসময় আমাদের বাসায় এসো। তোমার চাচী বলতেছিলো তোমার কথা। ইতালি যাওয়ার আগে সেই কত ছোট দেখেছে। এখন কত বড় হইছ সেটা দেখবে।
.
তিন চারদিন পর মনিরের আরো বোরিং লাগা শুরু করলো। সে বাকি হোম কোয়ারেন্টাইন শ্বশুরবাড়িতে পূরণ করার জন্য সেজেগুজে রওয়ানা দিলো। খবর পেয়ে মনিরের শ্বাশুড়ি বড় বড় দুইটা মুরগী জবাই দিলেন। জামাই এতোদিন পর আসছে, তার ওপর অসুস্থ বলে কথা। ভালো খাতিরদারি দরকার!
.
রাতে বিদেশ ফেরত দুলাভাইয়ের কাছে শালা শালীরা আবদার করলো রেস্টুরেন্টে খেতে যাওয়ার। মনির সবাইকে নিয়ে নামকরা এক রেস্টুরেন্টে ডিনার করতে গেল। সবাই যখন হৈ- হল্লা করে খাওয়াদাওয়া করছিলো তখন মনির দেখলো রেস্টুরেন্টের দেয়ালে লাগানো বিশাল টিভিতে সংবাদপাঠিকা বলছে, ‘সারাদেশে নিজ বাসায় হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ইতালি ফেরত ১২৪ জন বাংলাদেশী….

সোহাইল রহমান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *